যেই ছবিটা দিছি, সেই বইটা ছিলো নিক্সনের ওয়াটারগেট কেলেঙ্কারি নিয়ে। আল জাজিরার প্রথম ডকুমেন্টারির শিরোনাম এখান থেকেই নেয়া। প্রথম বললাম এই কারণে যে, তারা ঘোষণা দিয়েই বলছে তাদের রান্নাঘরে আরো আছে। সামনে সেগুলো আসবে।
আপাতত এইটা দিয়েই অবস্থা কী কী ভাবে মাজুল হইছে আসেন দেখি।
১/ আজিজরে আমেরিকা বলবে, ভাইসাব, আলাপ-সালাপ আর করতে পারতেছি না, বাইত যান।
২/ দেশে ফিরে আজিজ কী করবে? ওর লগে আর্মির কোর কমিটির লোকেরা বসবে? কেমনে বসবে? বসলে তো আজিজের গায়ের কাদা তাদের গায়েও লাগবে।
৩/ ডিজি ডিফেন্স পারচেইজ কোন আইনে ইজরায়েলের নজরদারির প্রযুক্তি কিনছে? দেশের আইন অনুসারেই সে পারেনা এই কাজ করতে। তার উপরে সে সোর্স গোপন করছে। দুইটা অপরাধ। তারে শাস্তি না দিলে যে দিবেনা তারেই ধরা যাবে।
৪/ যেই অনুষ্ঠানে প্রেসিডেন্ট যায় সেই অনুষ্ঠানে দাগী সন্ত্রাসী থাকে কীভাবে? এস এস এফ কী ঘাস খায়? আমি এই প্রেসিডেন্টেরে মানি আর না মানি সে সাংবিধানিক প্রধান এইটা রাষ্ট্রের স্বার্থ, নাগরিকের স্বার্থ। এস এস এফ রাষ্ট্রপতির নিরাপত্তা ইগনোর করছে। এইটা নিয়া রিট করা যায়।
৫/ হাসিনা আজিজরে কেমনে গিলবে? না গিললে আরেকটা আজিজ পাবে কেমনে?
৬/ সমাজ বা রাষ্ট্রের ওয়ার্কিং রিলেশন থাকে একটা নৈতিক ভিত্তির উপরে দাড়ায়ে। সেই ভিত্তি যে নাই তা প্রমাণ সহ উন্মুক্ত হয়ে গেছে। এই রাষ্ট্র চলবে কীভাবে? সরকারি কর্মচারীরা কাজ করবে কীভাবে? এই রাষ্ট্রের সাথে অন্য রাষ্ট্র এক্সচেঞ্জ করবে কীভাবে?
৭/ আজিজ ব্রাদার্স নাকি এখন ঢাকায়। তাদের নিয়া কী করবে আওয়ামী সরকার?
৮/ আজিজকে বাচাতে আওয়ামী লীগ মরিয়া হইছে। তাই একটা উরাধুরা বিবৃতি দিছে স্যেকুলারিজম, জামাত আর একাত্তর টাইন্যা। এর মানে, হে মহান অসাম্প্রদায়িক মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের স্যেকুলার শক্তি, আমার পাশে আইস্যা দাড়াও। আমারে রক্ষা করো। এই বিপদকে মোকাবেলায় এখন তাদের কোন বয়ান নাই। সেই পুরনো অকেজো মুক্তিযুদ্ধের চেতনার আশ্রয় নিতে হইছে। এই বয়ান শুধু অকেজোই না, এখন কাউন্টার প্রোডাকটিভ। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতি এইটাই প্রমাণ করছে, তারা তাদের অনৈতিক, ফ্যাসিস্ট আর মাফিয়া শাসনের আন্তর্জাতিক বৈধতা পাওয়ার জন্য সো কল্ড স্যেকুলার লিবারেল মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি বলে পরিচয় দেয়। স্যেকুলারিজম তাদের সকল বদমায়েশীর ঢাল।
খেয়াল করবেন, বয়ান নাই তো ক্ষমতাও নাই। এই ডকুমেন্টারি তাদের সব বয়ান কাইড়্যা নিছে। এমনকি, হাসিনার বিকল্প কী, সেই বয়ানও কাইড়্যা নিছে।
মুজিব বর্ষে তাদের হাতে হারিকেন ধরায়ে দিছে আল জাজিরা।
এই ডকুমেন্টারি ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের নৈতিক শক্তি বাড়ায়ে দিছে বহুগুণে। নৈতিক শক্তিই লড়াইয়ের বৈধতা দেয় আর বিজয় এনে দেয়। মুক্তিযুদ্ধে আমাদের লড়াইটা ছিলো বৈধ আর নৈতিক। তাই আমরা বিজয়ী হইছিলাম।
সব হারায়ে এই রিফিউজির অবর্ণনীয় জীবনের ভার আছে আমার। দেশ থেকে বিতাড়িত সকলেরই তা আছে। গুম আর ক্রস ফায়ারে খুন হয়ে যাওয়া স্বজনের সকল পরিবারেই আরো দুর্বহ বেদনা আছে। জেল জুলুম নির্যাতনের শিকার সকল মজলুমেরই আছে কষ্ট আর কান্নার দীর্ঘ ইতিহাস। কিন্তু সব হারিয়েও কিন্তু আজ মনটা শান্ত হয়েছে এই ভেবে, আমাদের এই লড়াই ন্যায়ের। এই লড়াইয়ে জীবদ্দশায় বিজয় দেখে যেতে না পারলেও অন্তত এই স্বান্তনা থাকবে যে সর্বশক্তি দিয়ে এই ভয়াবহ মাফিয়া দানবের বিরুদ্ধে পরিনতির তোয়াক্কা না করে রুখে দাড়াতে পেরেছিলাম। আমরা রাষ্ট্রকে রক্ষা করতে চেয়েছিলাম।
আমাদের জীবন ধ্বংস হয়ে গেলেও বাংলাদেশ টিকে থাকুক তার গৌরব আর সম্ভাবনা নিয়ে। যেদিন বাংলাদেশের মানুষ বিজয়ী হবে সেদিন আমরা বেচে না থাকলেও বিজয়ের বিউগল ধ্বনিতে আমাদের আনন্দ আর শুভকামনাকে খুঁজে নিয়েন।
– রিফাত আহমেদ পাভেল