মুক্তচিন্তা, সামাজিক ন্যায়বিচার, গণতন্ত্র, বিজ্ঞানমনস্কতা, ধর্মান্ধতা ও কুসংস্কারবিরোধিতা ব্যাপারগুলো কিছু বুদ্ধিজীবীর মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। তাদের কেউ কেউ এগুলো নিয়ে জটিল থেকে জটিলতর কিছু কথা লেখতেন, কেউ হয়ত পাঠ করত, কেউ সম্মান দেখিয়ে তুলে রাখত। কিন্তু একটি শোষণ-নিপীড়ণহীন, ন্যায়ভিত্তিক গণতান্ত্রিক সমাজ এবং স্বাধীন বিচার ব্যবস্থা সম্পন্ন একটি আধুনিক সমাজ গঠণের জন্য মুক্তচিন্তা, ইহজাগতিকতা, বিজ্ঞানমনস্কতা ও কুসংস্কারবিরোধিতা যে সাধারণ মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়াটা অতি আবশ্যক তা অনুধাবন করতে পেরেছিলেন গুটিকয়েক মানুষ।
অনন্ত বিজয় দাশ (অক্টোবর ৬, ১৯৮২-মে, ১২, ২০১৫) সে রকম একজন। তার জন্ম বাংলাদেশের সিলেট শহরে যেখানে এসব ব্যাপারে কথা বলার মত মানুষ সব সময়ই ছিল হাতে-গোণা। হয়ত কৈশোরে অবাক হয়ে লক্ষ্য করেছিলেন, এক ভয়াবহ অন্ধকার বলয়ে আটকা পড়েছে এই সমাজ। আবার বুঝতে পেরেছিলেন, এ অন্ধকার থেকে মুক্তির জন্য নামতে হবে সংগ্রামে। অনন্ত বিজয় লেখালেখি শুরু করেছিলেন মূলত মুক্তমনা দিয়ে। ড. অভিজিৎ রায় তাকে মুক্তমনায় লিখতে উৎসাহিত করেছিলেন। মুক্তমনা তখন ওয়েব সাইট ছিল, সেখানে দেশ-বিদেশের অনেক লেখক নানাবিধ বিষয় নিয়ে লেখতেন। মুক্তমনার চিন্তা-চেতনা সকলের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে তিনি ছিলেন বদ্ধ পরিকর।
২৬শে ফেব্রুয়ারি ২০১৫ বইমেলা থেকে বাসায় ফেরার পথে নির্মমভাবে খুন হলেন অনন্তের মেন্টর অভিজিৎ রায়। অভিজিৎ রায়ের মৃত্যুর পরে দেশের মুক্ত-চিন্তক’রা নিজেদের জীবনের উপর বিপদের আঁচটা আবারো টের পেলেন। অনন্ত বিজয় দাশ আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলোর কাছে সাহায্যের আবেদনও শুরু করলেন। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই কোনো সন্তোষজনক উত্তর মিললো না। বিপদগ্রস্থ লেখকদের নিয়ে কাজ করা সংগঠন ‘আইকরন’ আবেদন গ্রহণ করলেও নির্দিষ্ট কোন সময়সীমা বেঁধে দিতে অস্বীকার করলো। এরই মধ্যে ‘আন্তর্জাতিক সংবাদপত্রের স্বাধীনতা দিবসে’ অংশগ্রহণ ও বাংলাদেশের বর্তমান মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে বক্তব্য প্রদানের জন্য আমন্ত্রণ এল সুইডিশ পেনের পক্ষ থেকে । তবে তিনি সেখানে যাওয়ার সুযোগ পেলেন না। পরিশেষে ২০১৫ সালের ১২ই মে’র সেই বিভীষিকাময় সকালে বাসার সামনে তাকে কুপিয়ে হত্যা করলো কিছু নরপশু।
অনন্ত আজ পৃথিবীতে নেই কিন্তু তার আদর্শ আমাদের অন্তরে অনন্তকাল রয়ে যাবে। আমরাও চাই বাংলাদেশে হউক মুক্ত চিন্তার চর্চা, মানুষ পাক মত প্রকাশের স্বাধীনতা এবং একটি স্বাধীন বিচার ব্যবস্থা সম্পন্ন আধুনিক গণতান্ত্রিক সমাজ। আমরা ঘটাতে চাই মুক্তচিন্তার বিপ্লব; সাংস্কৃতিক বিপ্লব। চাই এই বেনিয়াবাজির সমাজ পরিবর্তন। আমাদের দর্শনে আছে ন্যায়বিচার, গণতন্ত্র, বিজ্ঞানমনস্কতা আর যুক্তিবাদ। গাহি মোরা সাম্যের গান।
আপনিও যদি সহমত পোষণ করেন আমাদের ভাবনার সাথে, যুক্ত হতে চান আমাদের কর্মে, হতে চান আলোর দিশারী, তবে নির্দ্ধিধায় যোগাযোগ করুন আমাদের সাথে। যুক্ত হোন আমাদের এই আন্দোলনে। গর্জে উঠুন অন্যায়, অবিচার আর অগণতান্ত্রিক শাষকদের বিরুদ্ধে।
– লেখক, রিফাত আহমেদ পাভেল