কাকে স্বাধীনতা বলে এবং কাকে পরাধীনতা বলে -কোন কালেই সেটি কোন জটিল বিষয় ছিল না। আজও নয়। আলো ও আঁধারকে চিনতে বেশী বিদ্যাবুদ্ধি লাগে না; এমনকি নিরক্ষরও সেটি বুঝে। বিষয়টি তেমনি সহজ স্বাধীনতা ও পরাধীনতা চেনা নিয়েও। উভয়েরই সুনির্দিষ্ট এবং সর্বজন স্বীকৃত সংজ্ঞা বা আলামত আছে। স্বাধীনতার অর্থ মূলতঃ জনগণের স্বাধীনতা; সেটি যেমন সরকার নির্বাচনের স্বাধীনতা, তেমনি সরকার পরিচালনা এবং সরকারের উপর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণের স্বাধীনতা। এখানে সরকার বাচে জনগণের প্রতি দায়বদ্ধতা নিয়ে। স্বাধীনতার অর্থ কখনোই সরকারের স্বাধীনতা নয়। এমন স্বাধীনতা এক কালে অধিকৃত দেশের জনগণের উপর সাম্রাজ্যবাদী আগ্রাসী শক্তির ছিল। তাই বাস্তবতা হলো, সরকার স্বাধীনতা পেলে বিলুপ্তি ঘটে জনগণের স্বাধীনতার। বস্তুতঃ স্বাধীন দেশের পরিচয়টি হলো, সেখানে সরকার কাজ করে জনগণের প্রতিনিধি রূপে; স্বেচ্ছাচারি প্রভু রূপে নয়।
জনগণের স্বাধীনতার অর্থঃ নিজের ভাগ্য, নিজের পেশা, নিজের ধর্মপালন, নিজের রাজনীতি এবং নিজের শিক্ষা-সংস্কৃতি নিজে নির্ধারণের পূর্ণ স্বাধীনতা। সে স্বাধীনতা কখনোই কোন পরাধীন দেশের নাগরিকদের থাকে না। সেখান স্বাধীনতা থাকে একমাত্র শাসকদের। তারা যেমন যাকে ইচ্ছা তাকে ফাঁসিতে ঝুলাতে পারে, তেমনি জেলেও তুলতে পারে। গুমও করে দিতে পারে। এরা স্রেফ জাতির নেতা বা পিতা রূপে নয়, ভগবান রূপেও হাজির হতে পারে –যেমনটি হয়েছিল ফিরাউন। তারা সীমিত করতে পারে ধর্মপালন এবং নিষিদ্ধ করে দিতে পারে সাংবিধানিক চর্চা।
পরাধীন দেশগুলির বড় আলামত হলো, সেখানে সরকার গঠনে জনগণের ভোটের দরকার হয় না। নির্বাচিত না হ্ওয়ায় জনগণের প্রতি সরকারের কোনরূপ দায়বদ্ধতাও থাকে না। তখন দেশ পরিণত হয় শাসকের নিজের মালিকাধীন বংশীয় তালুকে। নিজে মারা গেলে উত্তরাধীকার সূত্রে দেশের মালিক হয় তার সন্তানেরা। সে সূত্র ধরেই শেখ হাসিনার সন্তানেরা তাই এখন থেকেই দেশের শাসক হওয়ার স্বপ্ন দেখছে। এমন দেশে জনগণের পরাধীনতা বাঁচাতে প্রয়োজন পড়ে কেবল অস্ত্রের এবং সে সাথে অস্ত্রধারি অনুগত পুলিশ এবং সেনাবাহিনীর। প্রয়োজন পড়ে অনুগত বিচারক বাহিনীর। বস্তুতঃ এরূপ পরাধীন দেশগুলিতে সেনাবাহিনী, পুলিশ বাহিনী, প্রশাসন, মিডিয়া এবং আদালতের বিচারকগণ পরিণত হয় সরকারের অনুগত চাকর-বাকরে। এবং জনগণ পরিণত হয় নিরেট জিম্মিতে। তখন দেশ পরিণত হয় এক বিশাল জেলখানায়। এবং প্রশাসনের কর্মচারিগণ পরিণত হয় সে জেলখানার পাহারাদারে।
অথচ যে কোন স্বাধীন দেশের পরিচয় হলো, সরকার সেখানে সর্বদা দায়বদ্ধ থাকে জনগণের অভিমত মেনে চলায়। জনগণ তাদের মতামত ব্যক্ত করে যেমন ভোটের মাধ্যমে, তেমনি কথা, লেখনি এবং রাজপথে মিটিং-মিছিলের মাধ্যমে। কিন্তু পরাধীন দেশে মত প্রকাশের সে স্বাধীনতা জনগণের থাকে না। এবং সে স্বাধীনতা না থাকাটাই পরাধীনতা। এমন পরাধীনতা সচারচর ঘটে বিদেশী শত্রুর হাতে দেশ অধিকৃত হলে। তবে তেমন পরাধীনতা ভয়ংকর ভাবে নেমে আসতে পারে দেশী শত্রুদের হাতে দেশ অধিকৃত হলে। সেটি হয়, কোন স্বৈরাচারি ফ্যাসিস্ট শক্তি ক্ষমতায় গেলে। নিরেট বাস্তবতা হলো, বাংলাদেশ পরিণত হয়েছে তেমনি এক পরাধীন দেশে। দেশের সংবিধান স্বাধীনতার কথা বলে। কিন্তু সেটি কেবল কাগজে-কলমে; বাস্তবে তার কোন আলামত নাই। দেশটিতে স্বাধীনতা আছে কেবল ক্ষমতাসীন সরকারের। এবং তাদের স্বাধীনতা সুনিশ্চিত করতে বিলুপ্তি ঘটেছে জনগণের স্বাধীনতার। স্বাধীন ভাবে বাঁচতে চাওয়াটি এদেশে শাস্তিযোগ্য অপরাধ। তাতে বরং গুলির খাদ্য হতে হয়। এবং সেটি দেখা গেছে ২০১৩ সালে ৫ই মে’র রাতে শাপলা চত্ত্বরে। স্বাধীনতা না থাকায় দেশের স্কুল ছাত্র-ছাত্রীগণও শারিরীক নির্যাতনের মুখে পড়েছে নিরাপদ সড়কের দাবীতে রাস্তায় নেমে।
সরকারের স্বাধীনতা দিয়ে যে দেশ ও দেশবাসীর স্বাধীনতা নির্ণীত হয় না –বাংলাদেশ হলো তারই উদাহরণ। বাংলাদেশে আ্ওয়ামী লীগ এখন ক্ষমতায়। এ দলের নেতাকর্মীদের স্বাধীনতাটিও বিশাল। সে স্বাধীনতার প্রয়োগে তারা প্রচণ্ড স্বৈরাচারিও। যাকে ইচ্ছা তাকে যেমন তারা গ্রেফতার করে; তেমনি গুম, হত্যা এবং নির্যাতনও করে। তারা দেশের অর্থভাণ্ডার, ব্যাংক-বীমা, সরকারি জমি, বনসম্পদ এবং বিদেশ থেকে প্রাপ্ত লোনের অর্থের উপর প্রতিষ্ঠা করেছে নিজেদের নিরংকুশ দখলদারি। তারা রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা এবং জনগণের স্বাধীনতা ছিনতাই করছে জনগণের ভোট ছিনতাই করে। জনগণের দ্বারা নির্বাচিত না হওয়ায় জনগণের প্রতি তাদের কোন দায়বদ্ধতাও নাই্। জনগণ যাতে তাদের অবৈধ ও ফ্যাসিবাদি শাসনের বিরুদ্ধে রাজপথে নামতে না পারে -সে জন্যই ছিনিয়ে নিয়েছে মত-প্রকাশ এবং মিটিং-মিছিলের স্বাধীনতা। এরূপ পরাধীনতা নিয়ে বাঁচাকে কোন সভ্য মানুষ কি কখনো স্বাধীনতা বলতে পারে
– রিফাত আহমেদ পাভেল