সেই ছোটবেলা থেকেই আমরা স্কুল থেকে পাওয়া অনেক বই খুব আনন্দের সাথে পড়ে পড়ে বড় হই। আমরা অনেক নতুন বিষয় সেইসব বইগুলো থেকে শিখি এবং জানি। সেই বইগুলোর মধ্যে কিছু বই হচ্ছে মানব সভ্যতার ইতিহাস, গুহাযুগে মানুষ কেমন ছিল, এরপরে মানুষ ধীরে ধীরে কীভাবে আগুন আর চাকা আবিষ্কার করলো, অস্ত্র তৈরি শিখলো, যোগাযোগ আর কথা বলার জন্য ধীরে ধীরে ছোট ছোট শব্দ উচ্চারণের মাধ্যমে ক্রমান্বয়ে ভাষার আবিষ্কার করলো, সাধারণ বৈজ্ঞানিক পরীক্ষানিরীক্ষা ইত্যাদি। সেইসব বই থেকে আমরা আরো নানাবিধ বিষয় জানতে পারি, যেগুলোর অনেককিছুই আমাদের প্রচলিত বিশ্বাসের পরিপন্থী।
ধরুন, ছোটবেলা থেকে আমরা আমাদের কিছু গুরুজনদের কাছ থেকে জানতাম, রোগব্যাধী হচ্ছে দেবতা বা আল্লাহ ভগবানের শাস্তি। কিন্তু পরে আমরা বই পড়ে জানতে পারি, সেগুলো হচ্ছে নানা ধরণের ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়ার কারণে সৃষ্ট শারীরিক সমস্যা। অথবা মানুষের শারীরিক কোন জটিলতা। বৃষ্টি কীভাবে হয়, বিদ্যুৎ কেন চমকায়, দিনরাত কীভাবে হয়, আকাশের তারাগুলো আসলে কী, এইসবই আমরা সেই বইগুলো থেকে শিখি। ছোটবেলা আমরা ভাবতাম, বা আমাদের দাদাদাদীদের থেকে শুনতাম, সেগুলো সম্পর্কে নানা রূপকথার মুখরোচক গল্প। গল্পগুলো শুনতে ভালোই লাগতো, কিন্তু সেগুলো আসলে গুরুত্ব দেয়ার মত কিছু ছিল না। আমরা আমাদের বিজ্ঞান বইতে যা পড়তাম, দিনশেষে সেগুলোই সঠিক তথ্য বলে ধরে নিতাম। সেই বইগুলোতে যা বলা রয়েছে, সেগুলোই কি শেষ কথা? সেগুলো নিয়েও কি আমরা প্রশ্ন তুলতে পারি না? সেগুলো কি যাচাই ছাড়াই আমাদের মেনে নিতে হয়? না। সাধারণত আধুনিক বিজ্ঞানের আবিষ্কারগুলো, মানব সভ্যতার ইতিহাস পর্যালোচনা, মহাকাশের নানা নক্ষত্রসমূহ, এইসব কিছুই অসংখ্যবার যাচাই করে দেখার পরেই আমরা জানতে পারি। এবং সেগুলোও প্রশ্নের উর্ধ্বে নয়। যাচাই করে যদি সেগুলোর মধ্যে ভুল পাওয়া যায়, সেগুলো ঠিক করে নিতে হয়। এভাবেই আমাদের সভ্যতা এবং জ্ঞান বৃদ্ধি পায়। সভ্যতার চাকা আসলে মানুষের জ্ঞান এবং ক্রমাগত নিজেদের জ্ঞানকে শুধরে নেয়ার ওপরই নির্ভর করে।
কিন্তু ধর্মগ্রন্থ কী সেই চাকা স্থবির করে দেয় না ?
– রিফাত আহমেদ পাভেল