ইসলামে পর্দাপ্রথা

আজকাল বাঙলাদেশের পথেঘাটে এক শ্রেনীর মানুষ দেখা যাচ্ছে, যারা কোন মেয়ের পোষাক কেমন তা নিয়ে রাস্তাঘাটেই রীতিমত মেয়েদের ওয়াজ নসিহত করতে শুরু করে। মাঝেমাঝে শুধু ওয়াজ নসিহতের মধ্যেই সেগুলো সীমাবদ্ধ থাকে না, অনেক সময় তারা সেইসব নারীদের নোংরা ভাষায় গালাগালি এবং মারধর পর্যন্ত করে। অনেক জায়গাতে টেনে হিচড়ে এদের পোষাক খুলে নেয়ার চেষ্টাও হয়। রীতিমত হেনস্থা এবং অপমান অপদস্থ করা হয়ে থাকে। সাধারণত মুমিন ভাইয়েরা ইউরোপ আমেরিকায় বোরখা পরার স্বাধীনতার পক্ষে কথা বলতে বলতে মুখে ফেনা তুলে ফেলেন, বিদেশে কোথায় কোন স্কুলে বোরখা নিষিদ্ধ হলো এই নিয়ে কান্নাকাটি করে হ্যাশট্যাগের বন্যা বহিয়ে দেন। সেইসব দেশে যেখানে তারা সংখ্যালঘু, সেসব দেশে তারা পোষাকের স্বাধীনতার পক্ষে দারুণ সোচ্চার। কিন্তু যে দেশে মুসলমান সংখ্যাগুরু সেইসব দেশে কিন্তু পোষাকের স্বাধীনতায় তারা একদমই বিশ্বাস করেন না। রাস্তাঘাটে রীতিমত শরীয়া পুলিশিং চলে।

এই দৃশ্য পাকিস্তান এবং আফগানিস্তানে বহুবছর আগে থেকেই দেখা যাচ্ছিল, বাঙলাদেশেও এই শরীয়া পুলিশিং এর কালচারের আমদানী ঘটেছে। কিন্তু কোন মেয়ে কোন পোষাক পরবে, কিরকম পোশাক পরবে, সেটি বলে দেয়ার তারা কে? সেইসাথে, রাস্তায় মেয়েদের এভাবে হেনস্থা করার সাহসও বা তারা পায় কোথা থেকে! সাধারণত এই ধরণের মানুষেরা নিজেদের ইসলামের রক্ষক বলেই দাবী করে। তাই প্রশ্ন জাগে, ইসলামে কী এরকম কাজের কোন বৈধতা আছে?

প্রতিটি মানুষের এই অধিকার থাকা উচিত, কোন ধরণের বাধাবিপত্তি ছাড়া, ভয়ভীতি বা সামাজিক চাপ ছাড়া সে যেন নিজের পোষাক নিজে পছন্দ করতে পারে। রাষ্ট্রের দায়িত্ব হচ্ছে তার নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। পোষাকের স্বাধীনতা হচ্ছে, ব্যক্তির পছন্দ বা অপছন্দ, দুইটির যেকোনটি করারই অধিকার। ধর্মীয় রক্ষণশীল সমাজে একটি বহুল প্রচলিত ধারণা হচ্ছে, ধর্ষিত বা নির্যাতিত নারীকেই ধর্ষিত বা নির্যাতিত হওয়ার জন্য দোষারোপ করা। দোষারোপ করা হয় এইভাবে যে, মেয়েটিরই চরিত্র ঠিক ছিল না! তার পোষাক ভাল ছিল না! রাতের বেলা বাইরে কেন গেল! এগুলো বলে বলে, এগুলো প্রচার করে করে আসলে সেইসব ধর্ষকদেরই আমাদের সমাজে উৎসাহ দেয়া হয়। আর যখন ধর্ষণের হাত থেকে নিজেকে রক্ষার জন্য মেয়েদেরই ওয়াজ নসিহত করা হয়, মেয়েদের ওপরই বোরখা হিজাব চাপিয়ে দেয়া হয়, এই ধরণের শিক্ষা আসলে নারী নির্যাতক এবং ধর্ষকদেরই উৎসাহিত করে। এই বিষয়টি নিয়েও আজকে আমরা খানিকটা আলোচনা করবো।

একটি বহুল প্রচলিত ইসলামিক মিথ্যাচার হচ্ছে এমন যে, ইসলাম নারীর জন্য পর্দা প্রথার সংযোজন করেছিল নারীর সম্মান রক্ষার স্বার্থে। অথচ ইসলামের পূর্বেও মক্কার পৌত্তলিক কোরাইশদের মধ্যে নারীদের জন্য পর্দা প্রথা ছিল এবং মদিনায় যাওয়ার পরে উমরের ক্রমাগত চাপ প্রয়োগের কারণেই পর্দার বিধান নাজিল হয় বলে ইসলামিক সূত্রগুলো থেকে জানা যায়। পর্দা প্রথার আবির্ভাব এবং বিধানসমূহ কীভাবে ইসলামে যুক্ত হলো, কোন প্রেক্ষাপটে কোন ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে কী ঘটেছিল?

সত্যিকার অর্থে ইসলামে পর্দা প্রথার উদ্ভব ঘটেছিল দাসী এবং স্বাধীনা নারীর পার্থক্য করার জন্যেই। বিষয়টি অসংখ্য তথ্য ইসলামি সূত্রগুলো থেকেই পাওয়া যায়

 

 

– রিফাত আহমেদ পাভেল

Share this

Leave a Reply

"Posting Comment is not available at the moment. Please try again later."

সর্বাধিক পঠিত ব্লগ

Calendar

December 2024
M T W T F S S
 1
2345678
9101112131415
16171819202122
23242526272829
3031  

অনন্ত বিজয়

অনন্ত বিজয় দাশ (অক্টোবর ৬, ১৯৮২-মে, ১২, ২০১৫) তিনি মুক্তমনার চিন্তা-চেতনা সকলের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে ছিলেন বদ্ধ পরিকর। ২০১৫ সালের ১২ই মে’র সেই বিভীষিকাময় সকালে বাসার সামনে তাকে কুপিয়ে হত্যা করলো কিছু নরপশু। অনন্ত আজ পৃথিবীতে নেই কিন্তু তার আদর্শ আমাদের অন্তরে অনন্তকাল রয়ে যাবে। আমরাও চাই বাংলাদেশে হউক মুক্ত চিন্তার চর্চা, মানুষ পাক মত প্রকাশের স্বাধীনতা এবং একটি স্বাধীন বিচার ব্যবস্থা সম্পন্ন আধুনিক গণতান্ত্রিক সমাজ। আমরা ঘটাতে চাই মুক্তচিন্তার বিপ্লব; সাংস্কৃতিক বিপ্লব। চাই এই বেনিয়াবাজির সমাজ পরিবর্তন। আমাদের দর্শনে আছে ন্যায়বিচার, গণতন্ত্র, বিজ্ঞানমনস্কতা আর যুক্তিবাদ। গাহি মোরা সাম্যের গান।

Get in Touch

Email: contact@anantabijoy.com