আজ মহান ৬ অক্টোবর

আজ অনন্ত বিজয় দাশের ৪১ তম জন্মবার্ষিকী। বলতে গেলে এই বয়সটা মানুষের জীবনের শ্রেষ্ঠ সময়। বাংলাদেশকে অনেক কিছু দেওয়ার ছিল অনন্ত বিজয়ের। কিন্তু এই দুর্ভাগা জাতি তাঁকে মূল্যায়ন তো করেইনি বরং করেছে হত্যা। এখানেই ক্ষান্ত হয়নি কর্তৃপক্ষ, বিচারের নামেও করেছে প্রহসন।

সরকার তার হত্যার বিচার কতদূর কি করেছে জানেন? গত বছর ব্লগার ও লেখক অনন্ত বিজয় দাশ হত্যা মামলার রায়ে চারজনের মৃত্যুদণ্ড দেয় আদালত। এর মধ্যে জীবিত তিনজনই পলাতক এবং চতুর্থ জন মৃত। ঐ চার নম্বর আসামি ২০১৭ সালে পুলিশের হেফাজতে থাকাকালীন হঠাৎ অসুস্থ হয়ে মারা যায়। আপডেট আপাতত এই। অর্থাৎ “কাজীর গরু কেতাবে আছে, কিন্তু গোয়ালে নেই”।

অনেকেই দেড় যুগ আগের জামাত বিএনপির নামের জুজুর ভয় দেখালেও সত্যটা হলো, দেশে এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ সংখ্যক নাস্তিক লেখক, ব্লগার ও প্রগতিশীল মানুষ হত্যাকন্ডের শিকার হয়েছেন বর্তমান সরকারের আমলে। জামাত বিএনপি থাকলে ভাল হতো নাকি পরিস্থিতি আরো খারাপ হতো সেটার আলোচনা তাই অনেকটাই অপ্রয়োজনীয়। কারন গত তিন বারের প্রহসনের নির্বাচনে নির্বাচিত সরকারের আমলে আমরা যা দেখেছি তা যথেষ্ট।

১৫ বছর আগে কি হতো না হতো বা হতে পারতো সেই আলোচনায় যাওয়ার আগে আলোচনা হওয়া প্রয়োজন অসাম্প্রদায়িকতা নিয়ে! সরকারের ভূমিকা গত তিন আমলে কি ছিল। অভিজিৎ রায়, বাবু, নীল, অনন্তদ, দীপনদের হত্যার বিচারের ব্যপারে সরকারের ভূমিকা বেশ পরিষ্কার। কখনও FBI এর তদন্ত রিপোর্ট গায়েব করে দেওয়া, কখন ও চাক্ষুষ হামলার শিকার ব্যক্তিকে সরাসরি এড়িয়ে গিয়ে তদন্তের রিপোর্ট জমা দেওয়া, নয়তো শুধুমাত্র পলাতক ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে মামলার রায় বের করে আনা, এসবের উদ্দেশ্য কী বলে? এই কাজগুলো কি বিএনপি জামাতের লোকেরা করেছে, নাকি তিন টার্ম ধরে ক্ষমতায় থাকা বর্তমান সরকারের প্রশাসন করেছে?

আসলে কোন লেখককে তার লেখার জন্য দেশ ত্যাগের ঘটনার সূচনা হয়েছিল স্বাধীনতার পরপরই। সেই ঘটনাও ছিল বর্তমান সরকারেরই তৎকালীন শাসনামলে। সেই কবির নাম দাউদ হায়দার। তিনি নির্বাসিত একজন বাংলাদেশী বাঙালী কবি, লেখক ও সাংবাদিক। তিনি ১৯৭৪ খ্রিষ্টাব্দে দেশ থেকে নির্বাসনের পর থেকে প্রথমে তের বছর ভারতে ও ১৯৮৭ থেকে পরবর্তীতে জার্মানীতে নির্বাসিত জীবন যাপন করছেন। তিনি বর্তমানে একজন ব্রডকাস্টিং সাংবাদিক। তিনি বাংলা ভাষার একজন আধুনিক কবি যিনি সত্তর দশকের কবি হিসাবে চিহ্নিত। তার একটি বিখ্যাত কাব্যের নাম “জন্মই আমার আজন্ম পাপ”। তার কবিতা “কালো সূর্যের কালো জ্যোৎস্নায় কালো বন্যায়” ১৯৭৪ সালের ২৪ই ফেব্রুয়ারি দৈনিক সংবাদ পত্রিকায় মুদ্রিত হলে তার বিরূদ্ধে আদালতে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের জন্য মামলা করা হয়। পুলিশ তাকে ১১ই মার্চ ১৯৭৪ তারিখে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের কারণে গ্রেফতার করে। এরপর ১৯৭৪ এর ২১শে মে সরকার তাঁকে দেশ থেকে বহিষ্কার করে দেয়।

কেঁচো খুঁড়তে গিয়ে তাই সাপ বেরিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনাই বেশী। বিএনপি-জামাত তো বরাবরের মতই মৌলবাদী মতাদর্শে বিশ্বাসী। আওয়ামী লীগ কি সেই একই বিশ্বাসের বিশ্বাসী দল? তা হলে তারা তা সরাসরি বলুক। অহেতুক বিএনপি-জামাতের মত জুজুর ভয় দেখিয়ে তারা আসলে কি প্রমান করতে চাইছে? ধরি মাছ, না ছুই পানি?


রিফাত আহমেদ পাভেল

Share this

Leave a Reply

"Posting Comment is not available at the moment. Please try again later."

সর্বাধিক পঠিত ব্লগ

Calendar

December 2024
M T W T F S S
 1
2345678
9101112131415
16171819202122
23242526272829
3031  

অনন্ত বিজয়

অনন্ত বিজয় দাশ (অক্টোবর ৬, ১৯৮২-মে, ১২, ২০১৫) তিনি মুক্তমনার চিন্তা-চেতনা সকলের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে ছিলেন বদ্ধ পরিকর। ২০১৫ সালের ১২ই মে’র সেই বিভীষিকাময় সকালে বাসার সামনে তাকে কুপিয়ে হত্যা করলো কিছু নরপশু। অনন্ত আজ পৃথিবীতে নেই কিন্তু তার আদর্শ আমাদের অন্তরে অনন্তকাল রয়ে যাবে। আমরাও চাই বাংলাদেশে হউক মুক্ত চিন্তার চর্চা, মানুষ পাক মত প্রকাশের স্বাধীনতা এবং একটি স্বাধীন বিচার ব্যবস্থা সম্পন্ন আধুনিক গণতান্ত্রিক সমাজ। আমরা ঘটাতে চাই মুক্তচিন্তার বিপ্লব; সাংস্কৃতিক বিপ্লব। চাই এই বেনিয়াবাজির সমাজ পরিবর্তন। আমাদের দর্শনে আছে ন্যায়বিচার, গণতন্ত্র, বিজ্ঞানমনস্কতা আর যুক্তিবাদ। গাহি মোরা সাম্যের গান।

Get in Touch

Email: contact@anantabijoy.com